বিশিষ্টজনের অভিমত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় ইসি « বিডিনিউজ৯৯৯নেট

বিশিষ্টজনের অভিমত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় ইসি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ | ৯:১১
ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ | ৯:১১
Link Copied!

দেশে নির্বাচন কমিশন গঠনে তোড়জোড় চলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) কেন্দ্র করেই মূলত কমিশনের কার্যক্রম মূল্যায়িত হয়। স্বাধীনতার পর থেকে সিইসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ ভালো করলেও কয়েকজনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জাতীয় নির্বাচন কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

কারও কারও ভূমিকায় ব্যত্যয় ঘটেছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারও। গত অর্ধশতকে সিইসি পদে দায়িত্ব পালনকারী ১২ জনের মধ্যে ৭ জন সাবেক বিচারপতি এবং ৫ জন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা। ১৯৯৬ সাল থেকে সিইসি পদে সাবেক সচিবদের নিয়োগ শুরু হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সিইসি রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদ। এই পদে একটি আস্থার জায়গা থেকে অভিজ্ঞদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যাতে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা থাকে। সংশ্লিষ্টরা যদি সেই আস্থার পরিচয় দিতে না পারেন, তখন সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের বাইরে থেকেও সিইসি নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। যাকেই দেওয়া হোক, মূল বিষয় হচ্ছে-জনস্বার্থ সামনে রেখে কাজ করা। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন থেকে আসা কেউ কেউ তুলনামূলক নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন-এমন নজিরও আছে।

বিজ্ঞাপন

সার্চ কমিটির সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, সিইসি পদে অন্য কোনো পেশার কাউকে আনা গেলে তিনি যদি কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটা ভালো। কিন্তু পেশা কোনো ব্যক্তিকে মহান করে না। ব্যক্তিই পেশাকে মহান করে। তিনি বলেন, ইসির বর্তমান কাঠামোয় স্বাধীনভাবে কাজ করা কঠিন। বড় দুই রাজনৈতিক দলই এখানে প্রভাববিস্তার করতে চায়। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ইসিতে হস্তক্ষেপ করবে না। তাহলেই ভালো সিইসি বা নির্বাচন কমিশন পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিচারপতি মো. ইদ্রিস প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। এরপর ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন একেএম নূরুল ইসলাম। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিলেন বিচারপতি এটিএম মাসুদ। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর অর্থাৎ ১১ মাসের জন্য ছিলেন বিচারপতি সুলতান হোসেন খান। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি আব্দুর রউফ। এরপর এক বছরের জন্য ১৯৯৬ পর্যন্ত দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিচারপতি একেএম সাদেক।

১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিইসি ছিলেন মোহাম্মদ আবু হেনা। এরপর ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিলেন এমএ সাইদ। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিচারপতি এমএ আজিজ। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়কের আমলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পান সাবেক সচিব এটিএ শামসুল হুদা। তিনি ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক সচিব রকিবউদ্দীন আহমেদ সিইসি হিসাবে মেয়াদ পার করেছেন ২০১৭ সালে। বর্তমানে সিইসির দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সচিব কেএম নূরুল হুদা। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক সচিব বলেন, সাবেক বিচারপতি বা সাবেক সচিবদের দায়িত্ব দেওয়ার মানে হচ্ছে তারা দায়িত্বশীল জায়াগায় ছিলেন। কিন্তু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে তিনি যদি সেই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রাখতে না পারেন, তাহলে তো সাবেক প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম হবেই। এটা কেউ স্বীকার করুন বা না করুন। কাজেই এবার নিয়োগের সময় দেখা দরকার কে আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। অতীতে বিভিন্ন পদে কাজ করার সময় জনগণের আস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে পেরেছেন কি না। এসব দিক মাথায় রেখে ইসি গঠন করা হলে ভালো ফল মিলতে পারে।

সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফের সময় মাগুরার নির্বাচনের কারণে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়ে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিইসির দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আবু হেনা। তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে আলাদা। এরপর সিইসির দায়িত্ব পালন করেন আবু সাঈদ। তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি ছিল। বিচারপতি এমএ আজিজ ভূঁইয়া ভোটার তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ না নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পান এটিএম শামসুল হুদা। তার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বহুল প্রশংসিত ছিল। কিন্তু রকিবউদ্দীন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশনকে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এটা ঠিক বিচার বিভাগের ও প্রশাসনের কোনো কোনো ব্যক্তির ভূমিকার কারণে নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তির কারণে প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। তিনি মনে করেন, সিইসির মতো পদটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আসা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, কমিশনারদের দুজন মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলামসহ মোট তিনজন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা। কবিতা খানম সাবেক জেলা ও দায়রা জজ।

সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। এর আগের রকিব কমিশনেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসন ক্যাডারের ছিলেন মোট তিনজন। অন্য দুইজন কমিশনার ছিলেন নিম্ন আদালত ও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। বর্তমান কমিশনসহ টানা তিনটি নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে একই ফরমেটে। অর্থাৎ মোট তিনজন প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন করে নিম্ন আদালত ও সেনা কর্মকর্তা। এবারও একই ফরমেটে নির্বাচন কমিশন গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সরকার চাইলে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।

বিষয়ঃ

সর্বশেষ: